১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল নির্ণয়-কার্ল ফ্রেডরিক গাউস

 ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল নির্ণয়


কার্ল ফ্রেডরিক গাউস

বিখ্যাত গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিক গাউস এর নাম শুনেননি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।কার্ল ফ্রেডরিক গাউস একজন প্রতিভাবান জার্মান গণিতবিদ ছিলেন।গণিত এবং বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখায় তার অবদান রয়েছে।তাকে 'গণিতের যুবরাজ' ও 'সরবকালের সেরা গণিতবিদ' বলা হয়।গণিত এবং বিজ্ঞানের বহু শাখায় তার বুহু প্রশংসাযোগ্য অবদান ছিলো য্র ফলে গাউসকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী গণিতবিদদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।গণিতের যেসব বিষয়ে তার অবদান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-সংখ্যাতত্ত্ব,গাণিতিক বিশ্লেষণ,অন্তরক জ্যামিতি,চুম্বক ধর্ম,জ্যোতির্বিজ্ঞান,আলোকবিজ্ঞান ইত্যাদি।


গাউস ছোটবেলা থেকে অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন।সেই সিঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত দুষ্টু প্রকৃতির।তার দুষ্টূমিতে তার শিক্ষকেরা এমনকি তার পিতামাতাও খুবই বিরক্ত ছিলেন।দুষ্টুমি কমানোর জন্য একদিন এক শিক্ষক তাঁকে বললেন, ‘১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো যোগ করে নিয়ে আস।'শিক্ষক ভেবেছিলেন, এতে তাঁকে কিছুক্ষণ ব্যস্ত রাখা যাবে।কিন্তু শিক্ষকের সেই ধারণা নিমেষেই ভূল প্রমাণিত হয়ে যায়।চোখের পলকেই তৈরি গাউসের উত্তর।উত্তর হলো ৫০৫০।শিক্ষক বললেন, ‘কীভাবে?’ তাঁর উত্তর ‘১ আর ১০০ মিলে ১০১, ২ আর ৯৯ মিলে ১০১, ৩ আর ৯৮ মিলে ১০১, এভাবে ৫০ জোড়া। প্রত্যেক জোড়ার যোগফল ১০১। তাই ১০১ কে ৫০ দিয়ে গুণ করেছি।’


তবে এই গল্পটির বিস্তারিত বিবরণ কিছুটা অনুমান করা বলেই মনে করা হয়।কিছু লেখক, যেমন জোসেফ রটম্যান তার বই 'ফার্স্ট কোর্স ইন এলজেবরা' তে ঘটনাটি আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় গাউস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য নতুন করে আবিষ্কার করেন এবং ১৭৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন; তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে যেসব সুষম বহুভুজের সংখ্যা ফের্মা মৌলিক সংখ্যা তাদের কম্পাস ও দাগ-না-কাটা রুলার ব্যবহার করে আঁকা সম্ভব। এ আবিষ্কারটি গণিতের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল।


গাউস তার এই উদ্ভাবন নিয়ে অত্যন্ত গর্ববোধ করতেন এবং তার ইচ্ছে ছিল তার স্মৃতিফলকে একটি সুষম সপদশভূজ খোদাই করা থাকবে। তবে কারিগররা এতে অপারগতা প্রকাশ করে, কারণ সপ্তদশভুজ খোদাই করা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল এবং এই শ্রমসাধ্য সপ্তদশভুজকে ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বৃত্তের সাথে পার্থক্য করা যেত না।


১৭৯৬ সালটি ছিল গাউস এবং সংখ্যাতত্ত্ব উভয়ের জন্যেই অন্যতম সফল একটি বছর। মার্চের ৩০ তারিখ তিনি সপ্তদশভূজ অঙ্কনের একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন।তিনি মডিউল্ভিত্তিক পাটিগণিত আবিষ্কার করেন, যা সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ বহুগুণ সহজতর করে। তিনি 8 এপ্রিল দ্বিঘাত অন্যোন্যতা (quadratic reciprocity) নিয়মটি প্রমাণ করেন। এই অসাধারণ সাধারণ সূত্রের মাধ্যমে কোন দ্বিঘাত সমীকরণ মডুলার পাটীগণিতের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব কি না, তা নির্ধারণ করা যায়। ৩১শে মে তারিখে তিনি মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যটি অনুমান করেন, যা মৌলিক সংখ্যার বণ্টন সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করে।


গাউস আরও আবিষ্কার করেন যে সকল ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে সর্বোচ্চ তিনটি ত্রিভুজীয় সংখ্যা(triangular number) যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে; এই উদ্ভাবনের তারিখটি ছিল ১০ জুলাই এবং এ সম্বন্ধে তার ডায়েরিতে লেখা ছিল সেই বিখ্যাত শব্দগুচ্ছ 'ইউরেকা!'num = Δ + Δ + Δ." অক্টোবর 1 তারিখে তিনি সসীম ক্ষেত্র(finite field) সহগবিশিষ্ট বহুপদীর সমাধান সংখ্যার ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন, যা ১৫০ বছর পর ভেইল অনুমিতির জন্ম দেয়।


ধন্যবাদ সবাইকে...

No comments

Powered by Blogger.