ডানিং ক্রুগার ইফেক্টঃনা জেনেও জানার ভান করা

 ডানিং ক্রুগার ইফেক্টঃনা জেনেও জানার ভান করা

ডানিং ক্রুগার ইফেক্ট

বিজ্ঞানী নিউটন বলেছিলেন,"জ্ঞান সমুদ্রের পাড়ে আমি নুড়ি কুড়াচ্ছি।"একজন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েও জ্ঞান প্রসঙ্গে তিনি নিজেকে বড় করে ভাবেন নি,কারণ বিনয় হচ্ছে শুধু নিউটন নয় সকল মহাজ্ঞানীর চরিত্রের সৌন্দর্য।আমরা না জেনেও অন‍্যকে জ্ঞান দিতে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি।কোনো বিষয়ে নিজেকে জ্ঞানী বা পণ্ডিত প্রমাণ করার জন্য আমরা ব‍্যস্ত হয়ে থাকি।না জেনে জ্ঞান দেয়া বা পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করার এই অভ্যেসটা যখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তখন সেটা একটা সিনড্রোমে রূপ নেয়। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে "ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট" বলা হয়। 

     


যখন মানুষ না জেনেও জানার ভান করে, নিজেকে অতিজ্ঞানী বা সবজান্তা ভাবতে শুরু করে, তখন সেটা ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট নামক এই কগনিটিভ বায়াস-এ পরিণত হয়।


কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মনোবিজ্ঞানী ডেভিড ডানিং ও জাস্টিন ক্রুগার ১৯৯৯ সালে এক গবেষণার মাধ্যমে ডানিং-ক্রুগার ইফেক্টকে প্রমাণ করেন। তারা কিছু মানুষের ওপর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা চালান। রসবোধ, যুক্তিবোধ, ও ব্যাকরণ দক্ষতার পরীক্ষায় দেখা যায় যাদের স্কোর নিচের দিকে ছিল তারা নিজেদের দক্ষতাকে অন‍্যদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী বিবেচনা করছেন। গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল গ্রাফ আকারে প্রকাশ করলে দেখা যায়, বটম ও সেকেন্ড কোয়ার্টাইলে থাকা মানুষেরা পরীক্ষায় শূন‍্য থেকে মাত্র ৪০ পর্যন্ত স্কোর করা সত্ত্বেও নিজেদের স্কোরকে ৬০-৭০ পার্সেন্টাইল হিসেবে অনুমান করেছেন।

গবেষকদ্বয় এ প্রবণতাটিকে মেটাকগনিশনের একটি সমস্যা বলে অভিহিত করেন। মেটাকগনিশন হচ্ছে নিজের চিন্তাভাবনা, কর্মকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা।

অধ্যাপক ডেভিড ডানিং ও জাস্টিন ক্রুগার


এ সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য হলো:

i) তারা নিজেদের দক্ষতাকে প্রকৃত অবস্থা থেকে বেশি ভাবেন।
ii) অন্যের প্রকৃত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে উপলব্ধি করতে পারেন না।
iii) নিজেদর ভুল ও অদক্ষতাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন।

অধ্যাপক ডানিং-এর মতে, "একজন মানুষের যেসব জ্ঞান কোনো কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য দরকার, ঠিক একই গুণগুলো দরকার ওই কাজটি সম্পর্কে তার অদক্ষতার কথা বোঝার জন্য।"

কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কারও জ্ঞানভাণ্ডার যদি সীমিত থাকে তখন তাকে দুটো অসুবিধা মোকাবেলা করতে হয়- 

১)তারা ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছায়;

২)এ অক্ষমতার দিকটি তারা ধরতে ব‍্যার্থ হয়

আপনাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে কিন্তু মানুষ কেন ডানিং-ক্রুগার ইফেক্টে আক্রান্ত হয়?চলুন জেনে নেয়া যাক।

গ্রাফে ডানিং ক্রুগার ইফেক্ট

আজকাল কেউ কেউ কোনো বিষয়ে অল্প জেনে ঐ বিষয়ে নিজেকে পণ্ডিত ভাবতে শুরু করেন।আত্মবিশ্বাসী মানুষদের সকলেই পছন্দ করেন। তাই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী প্রমাণ করার জন্য কখনো কখনো কেউ কেউ নিজেদের জ্ঞানী প্রমাণ করার জন্য আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অভিনয় করেন।বুদ্ধিমান মানুষের মাঝেও এর প্রবণতা দেখা যায়।

যে কেউ ডানিং-ক্রুগার সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারেন। শুধু কম আইকিউ সম্পন্ন মানুষ এর শিকার হবেন বা কারও ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট থাকা মানেই যে তিনি স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন- এমন ধারণা একদম ভুল।


No comments

Powered by Blogger.