মানুষ কেন ঘুমায়?

 মানুষ কেন ঘুমায়?


পৃথিবীর সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই ঘুম একটি জরুরি প্রক্রিয়া। যা কি না মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক শ্বাসক্রিয়া, রক্ত সঞ্চালন, শারীরিক বৃদ্ধি ও সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই সময় আমাদের শরীরের পাঁচ শতাংশ বেশি রক্ত মস্তিষ্কের দিকে সঞ্চালিত হয়। যখন আমরা ঘুমোই, তখন আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কেন্দ্র এক টানা কাজ করে।

নিদ্রা আর জাগরণের প্রক্রিয়াটি সঠিক ভাবে চালু রাখার জন্য। প্রতি দিন ২৪ ঘণ্টায় আমরা ১৬ ঘণ্টা জেগে কাটাই আর ৮ ঘণ্টা থাকি ঘুমিয়ে। আর তার জন্য যে কেন্দ্রটির ভুমিকা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সেটি হল- আমাদের মস্তিষ্কের নীচের দিকে থাকা ছোট্ট বাদামের মতো একটি অংশ। যার নাম - হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus)। আমরা জেগে থাকব নাকি ঘুমিয়ে পড়ব, তার অনেকটাই নির্ভর করে হাইপোথ্যালামাস আর ব্রেন স্টেম নামে দু’টি বিশেষ অংশের ওপরে।

মস্তিষ্কের যে দু’টি অংশের কথা বললাম, তার কিছু নিউরন বা স্নায়ুকোষই এই কাজটার জন্য দায়ী। এদের দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে যে স্নায়ুকোষগুলি উত্তেজিত থাকলে আমরা এক টানা ১৬ ঘণ্টা জেগে থাকতে পারি, তারাই তখন ক্রমাগত ঘুম আনার জন্য দায়ী স্নায়ুকোষগুলিকে দাবিয়ে রাখে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস আর ব্রেন স্টেম এর বিশেষ কিছু স্নায়ুকোষ উত্তেজনার সঙ্কেত (সিগন্যাল) মস্তিষ্কের হায়ার সেন্টার বা কর্টেক্সে (মস্তিষ্কের ওপরের অংশটিকে) পাঠাতে থাকে যতক্ষণ আমরা জেগে থাকি বিশেষ রাসায়নিক সংবাদদাতা বা কেমিক্যাল নিউরো-ট্রান্সমিটার এর মাধ্যমে।

মস্তিষ্ককে উত্তেজিত রাখতে গিয়ে হিস্টামিন নামে এক ধরনের নিউরো-ট্রান্সমিটার নিঃসরণ করে হাইপোথ্যালামাস এর টিউবারো-ম্যামালিয়ারি নিউক্লিয়াস বা TMN নামে স্নায়ুগুলি থেকে। ঘুমের সময় হাইপোথ্যালামাস - এর ঘুমের জন্য দায়ী ভেনট্রোল্যাটেরাল প্রি-অপটিক নি‌উক্লিয়াস বা VLPO স্নায়ুকোষগুলো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এই সময়টিতে তারা ক্রমাগত জাগিয়ে রাখার স্নায়ুকোষগুলোকে পুরোপুরি দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চালায়।

এভাবে রাসায়নিক বার্তার (রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে বার্তা পাঠানো হয়) মাধ্যমে হাইপোথ্যালামাসের TMN স্নায়ুকোষগুলোকে জাগ্রত অবস্থা থেকে নিদ্রায় রুপান্তরিত করার সঙ্কেত পাঠায়। এ যেন জোয়ার আর ভাঁটার খেলা! মস্তিষ্কের এই সুইচটিই আমাদের নিদ্রা আর জাগরণের জন্য দায়ী।

No comments

Powered by Blogger.